ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

 সাগরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৮, ৬ জুন ২০২১ | আপডেট: ২২:৪৪, ৮ জুন ২০২১

‘জীবন ও জীবিকা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও মঙ্গলবার পালিত হয় বিশ্ব সমুদ্র দিবস। এ উপলক্ষ্যে সমুদ্রপরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সেভ আওয়ার সি’ মঙ্গলবার (৮ জুন) এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

এসময় বাংলাদেশে আলাদা একটি সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং গবেষকরা। তারা বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমায় রয়েছে সুনীল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা। আলাদা মন্ত্রণালয় করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুলে সাগর অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন ডলারের হাতছানি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। 

সেভ আওয়ার সি’র মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোসলেম উদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে সাগর অর্থনীতি নিয়ে আলাদা বরাদ্দ রাখা ছিল সময়ের দাবি। সেটা হয়নি। আজ হোক, কাল হোক সাগর অর্থনীতি হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জাভেদ আহমেদ, ওয়ার্ল্ড কনসারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ নাথ, সমুদ্র অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. দিলরুবা চৌধুরী, বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফি রিচার্স ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সমুদ্র বিশেষজ্ঞ এবং সেভ আওয়ার সির  পরিচালক এসএম আতিকুর রহমান, পেপার কাপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান কেপিসি ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী সাজেদুর রহমান এবং মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেল প্রমুখ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শুধু সমুদ্রসীমা অর্জন নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। সমুদ্রকে কত উপায়ে আমরা কাজে লাগাতে পারি তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বিশেষ করে সাগরের ইকোসিস্টেম ঠিক রাখা এবং এখানকার সম্পদ আহরণের বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা উদঘাটন করতে হবে’।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নিবার্হী জাবেদ আহমেদ জানান, সাগরের ইকোসিস্টেম ঠিক রেখে কিভাবে পর্যটন খাতকে লাভজনক করা যায় তা নিয়ে সরকার একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে। এসডিজিতে সাগর অর্থনীতির একটি সুনির্দিষ্ট টার্গেট নেয়া হয়েছে। আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি উঠছে। এটা হতে পারে। তবে এখন ১৯টা মন্ত্রণালয় সুনীল অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্লু ইকনোমি সেল প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। মূলত ব্লু ইকনোমি নিয়ে সরকারের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে।’

ওয়েবিনারে ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আলাদা মন্ত্রণালয় নেই বলে এত বিশাল সাগর সম্পদের নির্দিষ্ট অভিভাবক নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের এলোমেলোভাবে কাজ করছে। এ কারণে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নেভি, সাগর গবেষণা ইনস্টিটিউট, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, কোস্টগার্ড - এসব কিছুর সমন্বিত উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত নাথ বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। সমুদ্র বেশি উত্তাল হয়ে যাচ্ছে। ডিজাস্টার তৈরি হচ্ছে।’

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এমডি জাকারিয়া বলেন, ‘সমুদ্রের ইকনোমি অ্যাপ্লিকেশন কি কি হতে পারে, সরকারকে আমরা এখনও বোঝাতে পারিনি। শুধু মাছ ছাড়া সমুদ্রে আর কি কি সম্পদ আছে, তা আমরা তুলে ধরতে পারিনি।’

ভার্চুসো রিচার্স অ্যান্ড কনসালটেন্সি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলরুবা চৌধুরী বলেন, ‘ওভার ফিশিংয়ের কারণে সমুদ্র পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। গোস্ট নেটের জন্য সমুদ্রের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা কল্পনারও বাইরে।’

বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘ওশেনোগ্রাফি ইনস্টিটিউটকে সমুদ্রে নামতে দেয়া হচ্ছে না। নৌ-বাহিনীর অনুমোদন লাগে। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণে সঠিক তথ্য উঠে আসছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নদী ও পানিকে কেন্দ্র করে রয়েছে দুটি মন্ত্রণালয়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ এত বিশাল সমুদ্র নিয়ে একটি মন্ত্রণালয় নেই। এছাড়া সমুদ্রে পর্যটনের নামে যা কিছু করেছি, অনেক সম্পদ নষ্ট করেছি।’

সেমিনারে মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘এবারের বাজেটে সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে কোনও কিছু না থাকার কারণে আমরা হতাশ। সমুদ্র নিয়ে রাষ্ট্রীয় মনোভাব আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সমুদ্রসীমা জয়ের পরপরই এ নিয়ে একটি মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত ছিল।’

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি